uposohor mohila college

প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

কলেজের কার্যক্রম এগিয়ে চলার পথে হঠাৎ ষড়যন্ত্র শুরু হলো। কিছু লোক কলেজ মাঠের পশ্চিম পাশের জমির অর্ধেক বরাবর রাতারাতি দোকান তুলে হাট-বাজার  বসাবার ব্যবস্থা করে ফেলল। সংবাদ পেয়ে বাড়ি আসলাম। যারা দোকান-পাট তুলেছিলো তাদের ডাকলাম। তাদের বললাম, এখানে দোকান-পাট বসলে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ থাকবে না। দোকান-পাট সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারা পরিবেশ বোঝে না, শিক্ষা বোঝে না। তারা জানালো যে, কলেজের ঘরে লেখাপড়া হবে, পাশের দোকান পাঠে বেচাকেনা হবে, তাতে কলেজের ক্ষতি কী? তারা আমার  কথা শুনলো না। রাতারাতি আরো দোকান-পাট তুলে ফেললো। কী আর করা। কলেজের পরিবেশ রক্ষায় অবশেষে বাধ্য হয়ে প্রশাসনের সাহায্য নিলাম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জনাব সাখাওয়াত হোসেন এসে সব দেখে-শুনে জেলা প্রশাসকের কাছে রির্পোট দিলেন। জেলা প্রশাসক জমি হুকুম দখল করে কলেজকে দিলেন। আরেক সংকটে পড়লাম। জমি তো কিনতে চাইনি। এবার বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু টাকা পাব কোথায়! যা হোক, অবশেষে বহু কষ্টে টাকা যোগাড় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিলাম। এ সময় ড. আঃ মান্নান টাকা দান করেছেন। অধ্যক্ষ কুন্ডুদা অনেক টাকা ধার দিয়েছেন। মনু দিয়েছে। আখেরি সম্বল হিসেবে শিল্প ব্যাংকে আমার ত্রিশ হাজার টাকা জমা ছিলো। মনু সে তথ্য জানতো। সেই টাকাটাও সে নিয়ে নিলো। সে সময় আমার ছাত্র রূপাপাত গ্রামের নূর মোহাম্মদ দশ হাজার টাকা দান করে ছিল। সে কলেজ করার সময়ও দশ হাজার টাকা দিয়ে ছিল। এই সময় কদমীর আকরামও টাকা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারি কোষাগারে টাকা জমা হলো। প্রশাসন কলেজকে জমি দখল দিয়ে গেল। তারপরও বহু ভোগান্তি। সে জমি নিয়ে মামলাও করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ মোসায়েদ হোসেন ঢালী দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতার সাথে সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেছেন।

 

ব্রিজ নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে এল.জি.ই.ডি প্রধান প্রকৌশলী জনাব শহীদুল হাসানকে একদিন বললাম গ্রোথ সেন্টার , ব্রিজ, কলেজ হয়ে গেল এখন সহস্রাইল কালীনগর রাস্তাটি পাকা করে দাও। শহীদুল হাসান বললো ‘স্যার সহস্রাইল কালীনগর রাস্তায় আপনার কথায় যে চাল/গম মাটির কাজের জন্য দিয়েছি তাতে যদি মাটি না ফেলে চাল/গম ঢেলে দিতাম তা হলেও রাস্তার যে উচ্চতা হবে তা হয়ে যেত, অথচ এখনও মাটির কাজ অনেক বাকি’। আমি অনুরোধ করলাম তাড়াতাড়ি রাস্তাটি পাকাকরে দেয়ার জন্য। সে বললো ‘এ বছরেই মাটির কাজ শেষকরে অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে চার কি.মি. পাকা করে দিব’। আমি বললাম আমি যদি মরে যাই তাহলে তো আর পাকা রাস্তা দিয়ে বাড়ি যেতে পারবো না। উত্তরে শহীদুল হাসান বললো ‘স্যার আপনি যদি মরে যান তা হলেতো রাস্তা করবোই না’। এই ভাবে কথাবার্তা বলে সেদিন আগারগাঁও অফিস থেকে চলে এলাম। কিছুদিন পরে শুনলাম সহস্রাইল কালীনগর রাস্তা ৯ কি.মি. পাকা করার টেন্ডার হয়ে গেছে। ফরিদপুরের কন্ট্রাক্টর আমার ছাত্র খলিফা কামাল টেলিফোনে আমাকে জানালো যে সে ঐ রাস্তার কাজ পেয়েছে এবং শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। শুরু করা দিন আমাকে যেতে হবে বললো। রাস্তার কাজ শুরু হলো এবং বছর খানেকের মধ্যে শেষ হলো। প্রথম যে দিন পাকা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে ঢুকলাম সেদিন সহস্রাইল প্রান্তে নেমে আবেগে রাস্তাকে চুমু দিলাম। শহীদুল হাসান কলেজ কেন্দ্রিক আরো বহু রাস্তা ও ব্রিজ করে দিয়েছে। অবশেষে কলেজের সাথে এলাকার যোগাযোগ সুগম করার চেষ্টা করি। কারণ, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর থেকে কলেজে আসার যোগাযোগ ভাল ছিলো না। রাস্তা দরকার, কুমার নদীর উপর ব্রিজ দরকার। কী করা যায় ! আবার প্রকৌশলী শহীদুল হাসনকে বললাম। একদিন তাকে শুকনো  কুমার নদের মধ্য দিয়ে পাঁচুড়িয়া বাজারে নিয়ে গেলাম। কলেজের প্রতি অকৃত্রিম সহযোগিতার  হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য তাকে সংবর্ধনা দিলাম। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনেক লোক সমাগম হলো। কাজী সাহাবউদ্দিন (সাহেব কাজী) , আবু সালেহসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনে খুবই উৎসাহী ছিলেন।

 

শহীদুল হাসান অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে যদুনন্দী কালীনগর ব্রিজ দেখে বললো, ‘স্যার, এত কাছাকাছি দুটো ব্রিজ দেয়া যাবে না। তাছাড়া নদীতে পানিও থাকে না’। আমি বললাম, ‘ও  সব বুঝি না ব্যবস্থা কর’। ছাত্র-ছাত্রী ও জনগণের যাতায়াত সুবিধার জন্য ব্রিজ দিতে হবে। কিছুক্ষণ চিন্তা করে সে বললো, ‘দেখা যাক স্যার কী করা যায়’। কিছুদিন পরে ফরিদপুর এল.জি.ই.ডি থেকে আমাকে জানানো হলো যে, যদুনন্দী পাঁচুড়িয়া ব্রিজ এবং বড়খারদিয়া ড. আঃ মান্নানের বাড়ির কাছের ব্রিজের স্থান নির্ধারণের জন্য লোক যাবে। পরিদর্শন টিন আসবে ঢাকা থেকে। যথাসময়ে পরিদর্শন টিম এলো। পাঁচুড়িয়া হাটে গাড়ি রেখে পরিদর্শন টিম মাপজোফের কাজ শেষ করলেন। আমাদের বাড়িতে পরিদর্শন টিমকে সকালের নাস্তা করালাম। তখন শীতকাল। অন্য আয়োজনের সাথে ভাবী ‘দুধ চিতই’ পিঠা তৈরি করে রেখেছিলেন। শহরবাসীর কাছে ‘দুধ-চিতই পিঠা খুবই আনন্দের খাবার। যা হোক, চা-পান শেষে পরিদর্শন টিম খারদিয়ায় গেলো। সেখানকার কাজ শেষ করে দুপুরে ড. আঃ মান্নানের বাড়িতে তাদের আপ্যায়ন করা হলো। কিছুদিন পরেই যদুনন্দী পাঁচুড়িয়ার ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সমাপ্তও হলো সময়মত। চার উপজেলার যোগাযোগ নিরাপদ ‘নো খেয়া –নো সাঁকো’ হয়ে গেল। সবই মহান আল্লাহ গফুরুর রাহিমের ইচ্ছা। ওছিলা প্রকৌশলী শহীদুল হাসান।

 

কলেজ  প্রতিষ্ঠায় জমি-অর্থ-শ্রম-সম্পদ-বুদ্ধি দিয়ে যারা সাহায্য করেছেন, তাঁদের সবার নাম আমার এ-লেখায় থাকুক আর নাই থাকুক তাতে কিছু এসে যায় না। যাদের নাম উল্লেখ করতে পেরেছি তারা বড়, আর যাঁদের নাম উল্লেখ করতে ভুল হলো তারা ছোট- এমনটি নয়। কুড়িয়ে পাওয়া সেই চার আনা থেকে শুরু করে যারা লাখ টাকা দিয়েছেন-সকলেই কলেজের গর্বিত দাতা। আমি সকলের কাছে ঋণী।

Scroll to Top